রাহাত ছিল একটি ছোট শহরের এক সাধারণ ছেলে। সময়মতো ঘুম থেকে উঠা, নিয়মিত পড়াশোনা করা বা দায়িত্ব পালন করা—এসব তার কাছে যেন আকাশকুসুম কল্পনা। সারাদিন অলসভাবে ঘরে বসে টিভি দেখা, মোবাইলে গেম খেলা, আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া তার প্রধান কাজ। পরিবারের প্রত্যেকেই তার এই আচরণে হতাশ ছিল।
রাহাতের মা প্রায়ই তাকে বলতেন, “ছেলে, সময় গেলে কিন্তু আর ফিরে আসবে না। জীবনে কিছু করতে হলে এখনই সময়!” কিন্তু রাহাত হেসে বলত, “জীবন তো উপভোগ করার জন্য, মা! এত চাপ নেওয়ার কী দরকার?”
একদিন একটি ঘটনা রাহাতের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিল। তার ছোট বোন রিয়া ছিল খুবই মেধাবী। স্কুলের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সে প্রথম স্থান অর্জন করল। তার সম্মানে পরিবারে ছোটখাটো একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো। সেখানে একজন অতিথি, যিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, রিয়ার সাফল্যের প্রশংসা করে বললেন, “আমাদের জীবনে সাফল্য আনতে হলে পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতা সবচেয়ে জরুরি। সময়কে গুরুত্ব না দিলে জীবন আপনাকে গুরুত্ব দেবে না।”
রাহাত এই কথাগুলো শুনে হঠাৎ করে থমকে গেল। সে ভাবতে শুরু করল, “আমার বয়স তো ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি জীবনে কী করছি? এভাবে চলতে থাকলে আমার ভবিষ্যৎ কী হবে?”
পরদিন সকালে রাহাত সিদ্ধান্ত নিল, সে তার জীবনকে বদলাবে। শুরুতে খুবই কঠিন ছিল। সকালবেলা উঠতে সে ঘুম থেকে দেরি করত, বই নিয়ে বসতে মন চাইত না। কিন্তু মনের ভেতরে কোথাও একটা অদ্ভুত চ্যালেঞ্জ কাজ করছিল।
প্রথম ধাপে সে তার প্রতিদিনের কাজের একটি রুটিন বানালো। সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠা, শরীরচর্চা করা, তারপর পড়াশোনা। দুপুরের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা।
তারপর রাহাত একটি অনলাইন কোর্সে ভর্তি হলো। কোর্সটি ছিল প্রোগ্রামিং শেখার উপর। প্রথমদিকে তাকে কোডিং শিখতে অনেক কষ্ট করতে হলো। মাঝে মাঝে মনে হতো সব ছেড়ে দিয়ে আবার আগের মতো অলস জীবনে ফিরে যায়। কিন্তু সে তার ভেতরের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করল।
পরিশ্রমের ফল
এক বছরের মধ্যে রাহাত প্রোগ্রামিংয়ে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠল যে সে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করল। বিভিন্ন ছোট ছোট প্রজেক্ট করে কিছু টাকা আয় করত। প্রথমবার আয় করার পর যখন সে মাকে সেই টাকাগুলো হাতে দিয়ে বলল, “মা, এটা তোমার জন্য,” তখন মায়ের চোখে জল চলে এলো।
রাহাতের এই পরিবর্তন দেখে তার বন্ধুরাও অবাক হলো। যারা আগে তাকে অলস বলত, তারা এখন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে আসত।
সাফল্যের চূড়ায়
কয়েক বছর পর রাহাত একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করল। তার কোম্পানি সারা দেশে পরিচিতি লাভ করল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হতো। প্রতিটি অনুষ্ঠানে রাহাত তার নিজের গল্প শেয়ার করত।
সে বলত, “অলসতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু। একবার যদি আমরা নিজের ভেতরের শক্তি খুঁজে পাই, তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।”
উপসংহার
রাহাতের জীবন দেখিয়ে দেয়, সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত এবং পরিশ্রম মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। অলস জীবন হয়তো আরামদায়ক মনে হয়, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে কেবল দুঃখ এবং হতাশা আনে। রাহাতের মতো যারা অলসতা কাটিয়ে উঠতে চায়, তাদের উচিত ছোট ছোট পরিবর্তন দিয়ে শুরু করা। কারণ ছোট পরিবর্তনই একদিন বড় সাফল্যে রূপান্তরিত হয়।
এভাবেই রাহাত তার অলস জীবন থেকে সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছিল। তার গল্প আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে, আমাদের ভেতরের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে।