লাইফের লক্ষ্য থেকে বার বার দূরে সরে গেলে কী করবেন?
আপনি হয়তো লাইফ নিয়ে ভেবে চিন্তে কিছু প্ল্যান করেছিলেন।
হয়তো ফিটনেস ঠিক করা, নতুন একটা স্কিল শেখা, বা নিজের ব্যবসাকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
আপনি একদিন খুব মোটিভেটেড হয়ে ঠিক করলেন—“এবার আমি সিরিয়াস! এবার আর গাফিলতি নয়!”
কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই লক্ষ্য হারিয়ে যায়।
সকালে ঠিক করেন ব্যায়াম করবেন, কিন্তু দুপুর গড়াতেই মন বলে, “আজকে না, কাল থেকে শুরু করব!” ব্যবসা নিয়ে সিরিয়াস হতে চান, কিন্তু হুট করে টিভি সিরিজের একটা এপিসোড দেখার লোভ সামলাতে পারেন না।
এভাবেই একটা একটা করে “কাল থেকে” জমতে জমতে আপনার লক্ষ্য হারিয়ে যায়।
কিন্তু কেন?
কেন আমরা লক্ষ্য ঠিক করেও সেখানে থাকতে পারি না?
আমরা সবাই চাই সফল হতে। কিন্তু সঠিক পথ ধরে হাঁটতে পারি না।
কারণ?
আমাদের কিছু অভ্যাস এবং মানসিকতা লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
চলুন দেখি, কোন কোন কারণে আমরা লক্ষ্য ঠিক করেও বারবার পথ হারাই—
১. লক্ষ্য অস্পষ্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন
আপনি যদি শুধু বলেন, “আমি সফল হতে চাই” বা “আমি ফিট হতে চাই”—তাহলে সেটা আসলে কোনো লক্ষ্য নয়, এটা শুধু একটা ইচ্ছে। লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত।
ভুল লক্ষ্য: “আমি সফল হতে চাই।”
সঠিক লক্ষ্য: “আমি আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমার ব্যবসার প্রোডাক্ট ২০০০ হাজার মানুষের কাছে সেল করবো।”
ভুল লক্ষ্য: “আমি ফিট হতে চাই।”
সঠিক লক্ষ্য: “আমি আগামী তিন মাসে ৫ কেজি ওজন কমাবো এবং প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটবো।”
যখন আপনার লক্ষ্য স্পষ্ট থাকবে, তখন সেটা অনুসরণ করাও সহজ হবে।
২. উত্তেজনা থাকে, কিন্তু ধারাবাহিকতা থাকে না
প্রথম দিন খুব এনার্জি নিয়ে কাজ শুরু করেন। মনে হয়, এবার তো পাহাড়ও টপকে যাবো! কিন্তু দুই-তিন দিন পর সেই এনার্জি উধাও হয়ে যায়।
এর কারণ?
প্রথমদিকে আমরা খুবই মোটিভেটেড থাকি, কিন্তু মোটিভেশন তো জ্বালানি নয়, এটা একটা স্পার্ক মাত্র। যারা সত্যিকার সফল হয়, তারা মোটিভেশনের ওপর নির্ভর করে না, তারা অভ্যাস এবং শৃঙ্খলার ওপর নির্ভর করে।
যা করতে পারেন:
* একবারে বিশাল কোনো পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন না। ছোট ছোট ধাপে এগিয়ে যান।
* প্রতিদিন অল্প অল্প করে কিছু করুন, কিন্তু থামবেন না।
* “আজ ভালো লাগছে না” বলে বাদ দিবেন না, কারণ সফলতা আসে নিয়মিত চর্চা থেকে, আবেগ থেকে নয়।
৩. পরিবেশ আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত করে দিচ্ছে
আপনার আশেপাশের পরিবেশ আপনাকে সাহায্য করছে, নাকি বাধা দিচ্ছে?
আপনি যদি পড়াশোনা করতে চান, কিন্তু টেবিলের পাশে মোবাইল পড়ে থাকে, তাহলে বইয়ের চেয়ে স্ক্রল করাই বেশি আকর্ষণীয় লাগবে।
আপনি যদি ডায়েট করতে চান, কিন্তু ফ্রিজে চকোলেট-বার্গার রাখা থাকে, তাহলে লোভ সামলানো কঠিন হবে।
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান, কিন্তু আপনার বন্ধুরা সারাক্ষণ আড্ডা দেয়, তাহলে আপনি বেশিদূর এগোতে পারবেন না।
যা করতে পারেন:
* আপনার চারপাশ এমনভাবে সাজান, যাতে সেটি আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়।
* মোবাইল দূরে রাখুন, ফ্রিজ থেকে জাংক ফুড সরান, এবং এমন মানুষের সাথে সময় কাটান যারা আপনাকে উৎসাহ দেবে।
৪. স্বল্পমেয়াদি আরামের ফাঁদ
মানুষ সহজ কাজ পছন্দ করে। লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করা, টিভি দেখা, বা অলসভাবে সময় কাটানো সহজ।
আমাদের ব্রেন তাৎক্ষণিক মজা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। তাই যখনই কঠিন কিছু করার কথা ভাবেন, তখন ব্রেন আপনাকে সহজ আনন্দের দিকে টেনে নেয়।
ফলাফল?
- আজ একটা মুভি দেখি, কাল থেকে সিরিয়াস হবো।
- একটু ফেসবুক চেক করি, তারপর পড়বো।
- আজ একটু বেশি তাড়াতাড়ি ঘুমাই, কাল সকালে উঠবো।
যা করতে পারেন:
- নিজেকে স্বল্পমেয়াদি আনন্দ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
- কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিন যে, ওই সময় অন্য কিছু করবেন না।
- নিজের কাজকে মজার বানানোর উপায় খুঁজুন, যাতে সেটা সহজ আনন্দের বিকল্প হতে পারে।
তাহলে কীভাবে লক্ষ্য ধরে রাখবেন?
- লক্ষ্য ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন।
বিশাল কিছু করার কথা ভেবে ভয় পাবেন না। প্রতিদিন ছোট ছোট ধাপে এগোন।
- মোটিভেশনের ওপর নির্ভর করবেন না, বরং অভ্যাস তৈরি করুন।
প্রতিদিন ১% উন্নতি করলেই এক বছরে বিশাল অগ্রগতি হবে।
- নিজের অগ্রগতি ট্র্যাক করুন।
একটা নোটবুক বা অ্যাপ ব্যবহার করে লিখুন, প্রতিদিন আপনি কতটুকু এগোলেন।
- আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে অন্যকে জানান।
এতে একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হবে, যা আপনাকে ফোকাস রাখতে সাহায্য করবে।
- নিজেকে পুরস্কৃত করুন।
যদি নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ করতে পারেন, তাহলে ছোট একটা রিওয়ার্ড দিন নিজেকে। এতে আপনার ব্রেন সেই অভ্যাসকে ভালোবাসতে শিখবে।
সফলতা কোনো ম্যাজিক নয়।
এটা ছোট ছোট সঠিক কাজের ধারাবাহিক ফল।
আপনি যদি প্রতিদিন ১% উন্নতি করেন, তবে এক বছরে ৩৭ গুণ উন্নতি হবে।
আর যদি আজকেই শুরু না করেন, তাহলে এক বছর পরও আপনি ঠিক একই জায়গায় থাকবেন।
তাহলে এখন সিদ্ধান্ত আপনার…
আপনি কি “কাল থেকে” বলবেন, নাকি আজ থেকেই শুরু করবেন?