স্বপ্ন বিক্রির ধান্দাবাজি ব্যাবসা
ছবিতে যে মহিলাকে দেখছেন, তার নাম আস্মিতা পাটেল। তিনি একজন ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিজনেস কোচ।
ইউটিউবে তার চ্যানেলে আছে ৫ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার। তিনি মূলত অনলাইনে শেয়ার মার্কেট থেকে কিভাবে দ্রুত আয় করে ধনী হওয়া যায় তার কোর্স বিক্রি করেন। তার চটকদার বিজ্ঞাপনে তরুনরা চড়া দামে তার কোর্স কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
"গত ২ বছরে শুধু কোর্স বিক্রি করে তিনি ১০৪.৬ কোটি রুপি আয় করেছেন। মজার বিষয় তদন্ত করে দেখা গিয়েছে যে, শেয়ার ব্যবসা করে তার আয় ২ বছরে মাত্র ১২ লক্ষ রুপি এটাই বাস্তবতা।"
ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI) ৪২ জন বিনিয়োগকারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, ৫৩ কোটি রুপির বেশি ফি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, এবং তার এই অবৈধ কোচিং বিনিয়োগ বিজনেস থেকে আয় করা ১০৪.৬ কোটি রুপি কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না সেই ব্যাপারে জানতে নোটিশ দিয়েছেন।
আসলে আমাদের মত দরিদ্র দেশগুলোতে এই ধরনের স্বপ্ন বিক্রির ধান্দাবাজি ব্যাবসা খুবই সহজ। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর।
গ্রাজুয়েশন করা পর এরা জানে না তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি। এই সুযোগটা তথাকথিত বিজনেস কোচ, হ্যাপিনেস কোচ, বা ধান্দাবাজেরা নেয়। এরা খুব অল্প সময়ে প্রায় বিনা পরিশ্রমে কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখায়। শিক্ষিত বেকারেরা হুমড়ি খেয়ে এসব কোর্সে এনরোল করে।
মায়ের গহনা বিক্রি, বাবা পেনশনের টাকা, গরু বিক্রি, ছাগল বিক্রি, চড়া সুদে ধার নেয়া সহ সম্ভব সব ধরনের উপায়ে এরা মোটা অংকের কোর্সের টাকা যোগাড় করে। ব্যাবসা করার মত পুঁজি নেই, কিন্তু বাপের পেনশনের সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে বিজনেস কোচের কোর্সে ভর্তি হয়ে ধরা খেয়ে বসে আছে, এমন ঘটনা বহু আছে।
আস্মিতা পাটেলের মত কোচেরা বিজনেস কোচিং শেখাতে আসে, যারা নিজেরাই কোন বিজনেসে সফল হতে পারে নাই। এটাই বাস্তবতা হা হা...... আসলে কোন নিদিষ্ট বিষয়ে স্কিল ডেভেলপ করে সেই সেক্টরে সফল হওয়া খুবই কঠিন একটা কাজ। অনেক সময় স্কিল ডেভেলপ করতেই বছরের পর বছর পার হয়ে যায়।
কিন্তু বিজনেস কোচ হতে গেলে এসবের কিছুই লাগে না। সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যা কথা বলতে পারা, মানুষকে অলিক স্বপ্ন দেখানো, আর বিবেকহীন বেহায়া বেলজ্জ হতে পারলেই সে সফল বিজনেস কোচ। কোর্স ম্যাটেরিয়ালের জন্য তেমন বেশি কষ্ট করা লাগবে না, বিশ্বের নামকরা বড় বড় বিজনেস কোচ যেমন Tony Robbins, Marshall Goldsmith, Bob Proctor, Brian Tracy, Michael E. Gerberদের কোর্সে এনরোল করে, এদের কোর্স কন্টেন্ট জাস্ট বাংলায় কনভার্ট করে বেকার স্বপ্নবাজ তরুণদের সামনে উগড়ে দিলেই ৯০% কাজ হয়ে যায়।
৯০% তরুণ এসব বিজনেস কোচের নামই শোনে নাই, কাজেই এদের মুরগী বানানো খুবই সহজ। মোটা অংকের টাকা খরচ করে এদের কোর্সে এনরোল করার সামর্থ্য না থাকলেও সমস্যা নেই। নেটে আন্ডাগ্রাউন্ড ব্ল্যাকহ্যাট প্লাটফর্মগুলোতে এদের কোর্স নামমাত্র বা বিনামূল্যেই পাওয়া যায়।
আমারা পড়াশোনা বিমুখ অলস একটা জাতি। কষ্ট করে স্কিল ডেভেলপ করে ইনকাম করার থেকে, অল্প পরিশ্রমে বা বিনা পরিশ্রমে শুয়ে বসে ইনকাম করাতে আমাদের আগ্রহ বেশি। যতদিন আমাদের মধ্যে এই প্রবণতা থাকবে, ততদিন আমাদের সমাজে এসব চোর বাটপাড় কোর্স বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য থাকবে।
আমাদের দেশের দুর্বল আইনের শাসন এসব কোর্স বিক্রেতাদের সাহসী করে। ভারতে SEBI আস্মিতা পাটেলের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু দেখতে পাওয়া ভ্যাগ্যের ব্যাপার। পরিশেষে যারা বিজনেস কোচিং করে স্বল্প সময়ে কোটীপতি হবার স্বপ্ন দেখছেন তাদের বলব এই অলিক স্বপ্ন থেকে বের হয়ে আসেন।
যত দ্রুত বের হতে পারবেন ততই মঙ্গল। আপনি আসলে অনলাইনে কোর্স করে, সাতার শেখার স্বপ্ন দেখছেন যেটা একেবারেই হাস্যকর। সাতার শিখতে হলে আপনাকে পানিতে নামতেই হবে। সফল বিজনেসম্যান হতে হলে আপনাকে পথে নামতেই হবে। মনে রাখবেন পথে নামলে পথই পথ দেখায়। আর বিজনেস টিপস পেতে চাইলে ইউটিউব, চ্যাটজিপিটি এগুলোই যথেষ্ট টাকা দিয়ে কোর্স করার কোন মানেই দেখি না।