এক গ্রামে এক বৃদ্ধ কৃষক বাস করত। তার একটি তেজী ঘোড়া ছিল। কৃষিকাজে, ভারী জিনিস বহনে ও নিত্যদিনের চলাফেরায় সে ঘোড়াটিকে ব্যবহার করত।
একদিন হঠাৎ করেই ঘোড়াটি হারিয়ে গেল। অনেক খুঁজেও তাকে আর কোথাও পাওয়া গেল না।
কৃষকের স্ত্রীর খুব মন খারাপ। কিন্তু কৃষকের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ার জন্য তার কোনো আফসোস বা দুঃখবোধও নেই! তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কিছুই হয়নি।
আশেপাশের প্রতিবেশীরা এসে বলল, তোমার কি দুর্ভাগ্য! একটা মাত্র ঘোড়া তাও হারিয়ে গেল।
এ কথা শুনে কৃষক মৃদু হেসে বলল, হতে পারে!
তার কিছুদিন পর ঘোড়াটি আবার কৃষকের বাড়ি ফিরে আসলো এবং তার সাথে আরোও তিনটি বন্য ঘোড়া।
কৃষকের বাড়িতে সেদিন আনন্দের বান ডেকেছে। শুধু হারানো ঘোড়াটিই ফিরে আসেনি, তার সাথে আরও তিনটি।
প্রতিবেশীরা আবার দেখতে আসলো। সবাই বৃদ্ধকে বলতে থাকল, তোমার কি সৌভাগ্য! হারানো ঘোড়া ফিরে পেয়েছ, সেই সাথে আবার তিনটা বাড়তি ঘোড়া!
কৃষক আগের মতই হাসিমুখে বলল, হতে পারে!
দুই দিন পর কৃষকের একমাত্র ছেলে বন্য ঘোড়াগুলোর একটিতে চড়তে গিয়ে ছিটকে পড়ে গেল। দুর্ঘটনায় তার পা গেল ভেঙে।
এই খবর শুনে প্রতিবেশীরা এসে খুব আফসোস করল। দুঃখ করে কৃষককে বলল, এমন করে ছেলের পা ভেঙে গেল, সত্যিই বড় দুর্ভাগ্য!
কথা শুনে কৃষক লোকটি মুচকি হেসে বলল, হতে পারে!
পরদিন গ্রামে রাজার সৈন্যরা এসে হাজির। যুদ্ধের জন্য তারা গ্রামের যুবক ছেলেদেরকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে। সবাইকে নিয়ে গেলেও কৃষকের ছেলের ভাঙা পা দেখে সৈনরা তাকে নিল না।
এইবার প্রতিবেশীরা এসে বলল, তোমার তো দেখছি অনেক বড় সৌভাগ্য, ছেলেকে আর যুদ্ধে গিয়ে মরতে হবে না।
হালকা হেসে কৃষকের একই উত্তর, হতে পারে।
শিক্ষা :
১. জীবনের ভালো বা খারাপ ঘটনাগুলো সাময়িক এবং পরিবর্তনশীল।
২. এখন যা দুর্ভাগ্য মনে হয়, পরবর্তীতে তা সৌভাগ্যে পরিণত হতে পারে, এবং এর বিপরীতটাও সত্যি।
৩. জ্ঞানীর ধর্ম হচ্ছে কষ্টের দিনে ভেঙে না পড়া এবং আনন্দের মুহূর্তে উদ্বেলিত না হওয়া। যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত ও নির্মোহ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. সবকিছুই আপেক্ষিক এবং আমাদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি হয়তোবা ভবিষ্যতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না। তাই জীবনের অপ্রত্যাশিত ফলাফলগুলি আমাদের চমকে দেয়।
৫. এক জীবনে আমাদের ভালো-মন্দ সবকিছুই মেনে নিতে হয়। জীবনের সকল পরিবর্তনকে সহজভাবে নেওয়া আমাদের মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা এনে দেয়।