জীবন এক অদ্ভুত দৌড়। কেউ শুরু করে জুতাসহ, কেউ খালি পায়ে। কেউ জন্ম থেকেই একশো মিটার এগিয়ে থাকে, আবার কেউ হাঁটার আগেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। সময়ের সাথে আপনি বুঝতে পারবেন, এই দৌড়ের নিয়ম গুলো কখনোই সবার জন্য একরকম নয়।
আপনি হয়তো দেখবেন, কেউ সহজেই সব শিখে নেয়, পরীক্ষার আগের রাতে কয়েক ঘণ্টা পড়েই অসাধারণ ফলাফল করে। আর আপনি দিনের পর দিন খেটে গেলেও কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাচ্ছেন না।
আপনার আশেপাশে এমন অনেক মানুষ থাকবে, যাদের জীবন কোনো বাধাবিহীন রাস্তায় চলতে থাকে। তাদের কখনো টাকার চিন্তা করতে হয় না, বাবা-মায়ের দেওয়া ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটায়। আর আপনি একবার টিউশন ফি চাওয়ার আগে কতবার চিন্তা করবেন, সেটার কোনো হিসাব নেই।
জীবনের এই খেলা কেউ একদিনেই জিতে যায়, আর কেউ বছরের পর বছর খেলে করেও বোর্ডে নাম লিখাতে পারে না। কেউ একটা স্টার্টআপ শুরু করেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যায়, আর কেউ দশটা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়ে লোনের বোঝা টানতে টানতে হারিয়ে যায়।(ফাইসু)
কখনো এমন হবে, আপনি দেখবেন আপনার চেয়ে কম দক্ষ, কম পরিশ্রমী কেউ আপনার স্বপ্নের চাকরিটা পেয়ে গেছে। কারণ হয়তো সে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিল, হয়তো তার রেফারেন্স ছিল, হয়তো ভাগ্য তার পক্ষে ছিল। এসব ভেবে হয়তো আপনার নিজের ওপর রাগ হবে, জীবনকে অন্যায় মনে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই প্রতিযোগিতায় আপনি যদি শুধুই তুলনায় ব্যস্ত থাকেন, তাহলে ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই পাবেন না। এখানে কেউ একটা গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে, আরেকজন সেই গাড়িটা বদলে আরও দামি কিছু চায়। বড় ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া মানুষেরও স্বপ্ন থাকে আরও বড় কিছুর।
তাহলে উপায় কী?
উপায় হলো নিজের লেন ঠিক করা। এই দৌড় কারও জন্য নয়, আপনার নিজের জন্য। অন্যের জীবনের দিকে না তাকিয়ে, নিজের গতিতে এগিয়ে যাওয়া। জীবন সবসময় ফেয়ার হবে না, কিন্তু আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন—সময়ের সাথে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
কারণ, সত্যিকারের জয়ী হওয়ার জন্য গন্তব্যে পৌঁছানো দরকার নেই। দরকার শুধু এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
জীবনের অসম যুদ্ধ
জীবনটা আসলে একটা ম্যারাথন, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সবাই একই জায়গা থেকে দৌড় শুরু করে না। কেউ জন্মেই কয়েকশো মিটার এগিয়ে থাকে, আর কেউ দৌড় শুরু করার আগেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। আপনি যত বড় হবেন, ততই বুঝতে পারবেন—এই যুদ্ধ কখনোই ফেয়ার ছিল না, আর কখনো হবেও না।
কেউ জন্মেই মেধাবী, পরীক্ষার আগের রাতে কয়েক ঘণ্টা বই উল্টে পাশ করে যায়। আর আপনি রাতের পর রাত জেগে পড়ে, তবুও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে পারেন না। কেউ বাবার দেওয়া গাড়িতে চড়ে ইউনিভার্সিটিতে আসে, আর আপনি টিউশন ফি দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে টিউশন খুঁজছেন। জীবন এখানে থেমে থাকে না, আরও কঠিন হয়ে যায়।
আপনার পাশের মানুষটা হয়তো প্রথম চাকরিতেই লাখ টাকা বেতন পায়, আর আপনি ২০তম ইন্টারভিউ দিয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে আসেন। কেউ স্টার্টআপ শুরু করেই সফল হয়, আর কেউ একটার পর একটা ব্যর্থ উদ্যোগের বোঝা টেনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
এই দৌড়ে যদি আপনি শুধু তুলনাতে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই পাবেন না। কারণ এখানে প্রতিটা মানুষের রাস্তাই আলাদা, লড়াই ভিন্ন।
একজন যার মাথার উপর ছাদ নেই, সে একটা ঘরের স্বপ্ন দেখে। যার ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট আছে, সে বড় অ্যাপার্টমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকে। যার গাড়ি নেই, সে বাইক চায়। যার বাইক আছে, সে গাড়ির স্বপ্ন দেখে। গাড়ির মালিক বিলাসবহুল গাড়ি চায়, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত জেট কেনার পরিকল্পনা করে।
জীবনের এই প্রতিযোগিতার কোনো শেষ নেই। এখানে কোনো ফিনিশিং লাইন নেই। প্রতিদিনই শুধু সামনে ছুটে চলা, কখনো থামতে পারবে না।
তাই তুলনার বদলে নিজের গতিতে, নিজের রাস্তায় এগিয়ে যান। কারণ, সত্যিকারের জয়ী সে-ই, যে থেমে যায় না—যে লড়াই চালিয়ে যায়, নিজের মতো করে।।