২০ থেকে ৩৫ বছর। এই ১৫ টা বছর জীবনের সবচেয়ে সেনসেটিভ স্টেজ! জীবনের এই সময়টায় তার রঙ বারবার বদলাতে থাকে।
জীবনের এই সময়টায় এসে মানুষ সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে। তবুও টিকে থাকার চেষ্টা কমায় না। টিকে থাকার যুদ্ধে যে প্রখর তেজি যোদ্ধা হতে হয়। অন্যথায় মৃত্যু নিশ্চিত!
জীবনের এই সময়টায় এসে আপনি সব কিছু উপলদ্ধি করতে পারবেন। না চাইতেও চারপাশের অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই পরির্তনের মাত্রা এতই দীর্ঘ হয় যে, তখন তারা নির্বাক দর্শক ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
জীবনের এই সময়টায় এসে বেশির ভাগ মানুষই তার মাথা নত করে। যেমন ধরুন, আপনি এই বয়সটায় এসে আপনার বাবা অথবা মায়ের কাছে টাকা চাইতে লজ্জাবোধ করবেন। নিজেকে সংকোচিত করতে থাকবেন। আবার ধরুন, আপনার চাকুরি হচ্ছে না। তখন পরিবারের কোনো বিষয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলা কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। প্রিয় জনকে হারিয়ে ফেলবেন। অনেক কিছু অনিচ্ছায় মেনে নিতেও শিখে যাবেন।
এই সময়টায় আপনি চাইলেই হুট করে ট্যুরে যেতে পারবেন না। আপনার পছন্দের ক্যামেরাটা দোকানের গ্লাসের ভিতর থেকে দেখেই তৃপ্ত হতে চাইবেন। চাইলেই পরিবারের সাথে বসে আড্ডা জমাতে পারবে না। চাইলেই প্রিয় মানুষটাকে ধরে রাখতে পারবে না। কারণ আপনার পকেটে টাকা নেই। ভালো চাকুরি নেই। ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত!
কিন্তু যখন আপনার বসয় ৩৫ পার হবে, তখন আপনার কাছে সবকিছুই থাকবে। টাকা, পরিবার, সম্মান, প্রায় সঅঅব। মানুষ তো আর সারাজীবন বেকার থাকে না। কোনো না কোনো একটা পথ ঠিকই বের করে নেয়। অথচ তখন সময়ের বড্ড অভাব। আপনি ব্যস্ত হবেন সংসার ধর্মে, নানাবিধ ব্যস্ত কাজকর্মে। তখন ভুলেও যাবেন আপনার কিছু ইচ্ছা ছিল, ছিল কিছু স্বপ্ন।
সময়কে আকড়ে ধরা মহা ব্যস্ত আপনিটা একটা সময় বুড়ো হবেন। তখন অনেক টাকার মালিকও হবেন। পাবেন বিশাল অবসর। অথচ তখন আর শক্তি বা ইচ্ছা থাকবে না কিছু করার। তখন অনেকটা ঘরকুনো হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করবেন।
আমাদের জীবনটাই এমন! যখন আপনি ২৫ বছরের, তখন আপনার জীবনটাকে নিজ ইচ্ছায় চাইলেও সাজাতে পারবেন না। কারণ টাকার অভাব। টাকা হাতে আসার পরে হবে সময়ের অভাব। আর যখন টাকা অফুরক্ত, সময় থাকবে অনেক তখন আপনার ইচ্ছাগুলো ঘুণপোকার দখলে!
একটা ছেলে যখন বেকার থাকে, তখন সে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংকটে ভোগে না, তার প্রতি লোকের সম্মানটাও নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারের লোকেরা তার উপস্থিতি মেনে নেয় অভ্যাসবশত, আর বাইরের দুনিয়া তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। তার দিনগুলো কাটে অপমান আর অপারগতায়। ধীরে ধীরে সে সমাজের চোখে অদৃশ্য হয়ে যায়!
সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, আরেকটা দিন গেল, কিন্তু কিছুই বদলাল না। তারপর কাজ খুঁজতে বের হয়, আশায় থাকে কেউ একটা সুযোগ দেবে। কিন্তু দরজার পর দরজা বন্ধ হয়, কেউ বিশ্বাস করতে চায় না যে সে পারবে! "তোমার অভিজ্ঞতা নেই," "আমাদের লোক লাগবে না," "তুমি আনফিট" এই কথাগুলো তার আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয় তিলে তিলে!
বাড়িতে ফিরে দেখে, মা মুখ নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, বাবা মুখ ঘুরিয়ে নেন, ছোট ভাইবোনের চোখেও এক ধরনের প্রশ্ন "তুমি আসলে করছটা কি?"
যাকে সে ভালোবাসে, সেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়। কারণ, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে টাকা রোজগার করা শিখতে হয়, নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে প্রেম টাকা ছাড়া আর কিছু চেনে না!
বন্ধুরা মজা করে, আত্মীয়রা খোঁটা দেয়, প্রতিবেশীরা আড়ালে হাসাহাসি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেকেই ঘৃণা করতে শুরু করে। একদিন সে আর কোনো স্বপ্নই দেখে না, কারণ সে জানে, স্বপ্ন কেবল টাকাওয়ালাদের জন্য!
এই দুনিয়া শুধু সাফল্যের গল্প শুনতে চায়। এখানে বেকার হয়ে বেঁচে থাকা মানে অভিশাপ বয়ে বেড়ানো। অভাবের যুদ্ধে সবাই টিকে থাকতে পারেও না। কেউ কেউ আত্মহত্যা করে, কেউ কাপুরুষের মতো জীবন কাটায়, আর কেউ মেনে নেয় "জন্মই আমার আজন্ম পাপ!"