কথা হচ্ছিলো এক ফিলিস্তিনি বোনের সাথে।
‘বোন হাযাযাহ, তুমি বেজোড় রাতগুলি কীভাবে কাটাও?’
: বেজোড় রাত মানে?
: রমাদানের শেষ রাতগুলির ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখ কীভাবে উদযাপন কর? জেগে থাকো? কী কী ইবাদত করো?
: তুমি আমাকে হাসিয়ে ছাড়লে, অথচ আমি অনেকদিন যাবৎ হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে পুরো রমাদানটাই ক্বদর অন্বেষণের রাত হিসেবে কাটে। রমাদান আমাদের জীবনে আসে এক অসাধারণ ভালোলাগা, ভালোবাসা নিয়ে। যে কারণে আমরা শুরুর দিন থেকেই রাতের ঘুম পরিত্যাগ করি।
আমরা দিনে কিছু ঘন্টা ঘুমিয়ে নিই, ইফতারির পর হালকা বিশ্রাম নিই, অধিক ক্লান্তি এলে দু’চোখ বুজে একটু ঝিমিয়ে নেই। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে তারাবিহ আদায় করি। কুরআন তিলওয়াতে নিমগ্ন হই। অস্থির লাগলে রবের সাথে খানিক সিজদায় আলাপন সেরে নিই।
তারপর শীঘ্রই তাহাজ্জুদের সময় চলে আসে। তাহাজ্জুদে আমরা তারাবির থেকেও অধিক সময় ব্যয়ের চেষ্টা করি এবং আমাদের সিজদার জায়গাগুলি না ভিজলে অন্তর আনন্দিত হয় না।
এরপর হালকা কিছু খেয়ে নিই। কারণ বেশি খেতে সময়ের প্রয়োজন বেশি, অথচ শেষরাত এক মহা মূল্যবান সময়। তাই একদমই সময় নষ্ট করতে মন চায় না। খাওয়া শেষ হলে ফের কুরআনে ডুবে যাই, এভাবেই ফজর নিকটে চলে আসে। আর আফসোস করি, হায়, যদি রাত আরেকটু দীর্ঘ হতো!
কে জানে আজকের পর আগামীকাল রাত আর পাব কি না? শত্রুর কামান আমাকে বিধ্বস্ত করে দিলে আজকের রাতই শেষ রাত। ইতোপূর্বে আমি রমাদানের শুরুর দিন চার ভাইকে জান্নাতে যেতে দেখেছি। একটি বোন ছিল, পঞ্চম রমাদানে বুলেট এসে তাকেও জান্নাতে নিয়ে গেলো। এখন আমি আর আমার মা প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি কখন আমার ভাইদের সাথে মিলিত হবো।
কিছুদিন আগে বোনটির সাথে ফের কথা হলো।
: বোন হাযাযাহ তুমি কেমন আছ?
: আলহামদুলিল্লাহ, অনেক বেশি ভালো আছি। একটি সুসংবাদ আছে। আমার মাতা ভাইদের সাথে মসজিদুল আকসার রক্তাক্ত প্রহরে মিলিত হয়েছে।
◇◇◇
পরিস্থিতি মানুষকে ভাবতে শেখায়। ঈমানদারদের ঈমানকে শাণিত করে। রমাদান চলে যাচ্ছে। কিছুদিন ধরে ভীষণ এক মনঃকষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে। অন্তর ছটফট করছে এটা ভেবে যে রমাদানের অর্ধেকের বেশি চলেই গেছে! অথচ ইবাদত, দুয়া, আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া কতটা এখনও বাকি! যদি আজ থেকেই ক্বদর অন্বেষন শুরু করতে পারতাম তবে বাকি রমাদান দারুণ উদযাপিত হতো হয়তো। তাই তো এবারের ক্বদর বোন হাযাযাহ’র মতো কাটাতে চাই…।
▪︎ সময় ম্যানেজমেন্ট ▪︎
○ ইফতারির পর সালাত, মাসনুন আমল শেষ করে মিনিমাম রাত ১০/১১টা পর্যন্ত ঘুমানো,
○ ১১টা থেকে ১২:৩০/১:০০টা অব্দি সালাতুত তারাবিহ আদায়,
○ একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত কুরআন তিলওয়াত ও তাদাব্বুর করা,
○ রাত দুটো থেকে সাড়ে তিনটে অব্দি তাহাজ্জুদ, দুয়ায় সময় কাটানো,
○ সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মাঝে সাহরি করা,
○ চারটা থেকে ফজরের আগ অব্দি ইস্তিগফার ও দুয়া করা।
◇◇◇
▪︎ স্পেশাল কিছু আমল ▪︎
○ নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে দুয়ার একটি পার্ট অবশ্যই ফিক্সড করে নিতে হবে। সবচাইতে ভালো হয় যদি দুয়ার লিস্ট করতে পারেন।
○ মৃতদের নাম ধরে ধরে দুয়া।
○ আমার আশেপাশে পরিচিত অন্তত দশজন ব্যক্তির নাম ধরে দুয়া।
○ ইস্তিগফার, ইসমে আজম, দুরুদ, কুরআন ও সুন্নাহ দুয়াগুলি নিয়মিত চর্চা করা, এবং এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মারেফাতের নূর চাওয়া।
○ আল্লাহর কাছে অন্তর্চক্ষু, আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্য , রাসুলুল্লাহর (ﷺ) শাফাআত ও কাবার মেহমান হওয়ার দাওয়াত চেয়ে আকুল আবেদন করা। এবং এতটাই ইফোর্ট দেওয়া যে আপনাকে দুআ করার পর শান্ত হয়ে যাবেন এটা ভেবে যে (ইনশাআল্লাহ) আল্লাহ আপনার দুয়া কবুল করে নিয়েছেন।
○ বিশেষ করে নূন্যতম তিনদিন বা যতদিন সম্ভব সময়ের জন্য ইতিকাফে বসা। ইতিকাফে না বসলে বোঝা যায় না সময়ের বারাকাহ কী, আল্লাহর প্রেম কী, কুরআনের নূর কী।
যারা অবিবাহিত তাদের জন্য এটাই শেষ সুবর্ণ সুযোগ ভেবে লুফে নিন এই অফারটি। জেগে উঠুন প্রেমময় রবের ভালোবাসায়। প্রতিটি মুহূর্ত এক অনন্য ভালোবাসাকে সঙ্গী করে কাটান। ঠিক করুন ক্বদর আমাকে পেতেই হবে!
............................
কীভাবে কাটাবো শ্রেষ্ঠ রাতগুলি?
~তাজকিয়া তাসনিম