সবকিছুর জন্য হ্যাঁ বললেই কি মানুষ ভালো ভাবে?
আমরা অনেকেই এমন একটা মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছি—যে ভালো মানুষ হতে হলে সবকিছুর জন্য “হ্যাঁ” বলতে হবে। সবাইকে খুশি রাখতে হবে, কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, “না” বললে তুমি খারাপ বা স্বার্থপর বলে বিবেচিত হবে।
বিশেষ করে সমাজের অনেক নিয়মকানুন, পারিবারিক চাপে বড় হওয়া মানুষরা নিজের অনুভূতির চেয়ে অন্যের চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শিখে। কিন্তু এর ফলাফল কী হয়?
নিয়মিতভাবে নিজের সীমা লঙ্ঘন করে চলা মানুষ ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নিজের চাওয়া-পাওয়া, সময়, স্বস্তি—সবকিছু অন্যদের খুশি রাখার পেছনে বিলিয়ে দিতে দিতে একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
অনেকেই বুঝতে পারে না, কেন মনে হয়—সবাইকে খুশি রাখছি, তাও যেন কিছু একটা ঠিক নেই! ভেতরে ভেতরে একধরনের ক্ষোভ, বিষণ্ণতা আর অস্থিরতা জন্ম নেয়। এটাই হলো people-pleasing behavior-এর বাস্তব চিত্র।
এই আচরণ অনেক সময় আসে ছোটবেলার অভিজ্ঞতা থেকে—যখন বাবা-মা বা আশপাশের মানুষ বলেছে, “ভদ্র ছেলে-মেয়েরা কখনো না বলে না,” কিংবা “তুমি না বললে মা কষ্ট পাবে।”ফলে মানুষ শেখে, নিজের ইচ্ছাকে দমন করে গেলেই অন্যদের ভালোবাসা পাওয়া যায়।
কিন্তু বাস্তবে Assertiveness, অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস ও সম্মান বজায় রেখে নিজের সীমারেখা নির্ধারণ করা, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য দক্ষতা। assertive হওয়া মানে এই না যে আপনি রূঢ় বা অভদ্র; বরং আপনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—আপনি কী করতে পারবেন, আর কী করতে পারবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চায়, আপনি বলতে পারেন, “আমি বুঝি এটা আপনার জন্য জরুরি, কিন্তু এখন আমার সময় বা মানসিক প্রস্তুতি নেই এটা সামলানোর।” এটা কোনো অন্যায় নয়। এটা হচ্ছে নিজের প্রতি সম্মান দেখানো।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের শিখতে হবে—“না” বলাটাও ভালো মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য। কারণ আপনি যখন নিজের প্রতি সৎ থাকেন, তখন আপনার সম্পর্কগুলোও হয় গভীর, সত্যিকারের। আপনি আর অভিনয় করে চলেন না, বরং স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য একজন মানুষ হয়ে ওঠেন।
তাই প্রশ্ন করুন নিজেকে—আপনি কি সব সময় “হ্যাঁ” বলছেন শুধু অন্যকে খুশি রাখতে? যদি হ্যাঁ হয়, তবে সময় এসেছে নিজের কথা শোনার। সময় এসেছে বলার:
“না” বলাটা স্বার্থপরতা নয়, এটা নিজের প্রতি দায়িত্বশীলতা।
সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে যেন আপনি নিজেকে না হারিয়ে ফেলেন।
আপনি ভালো মানুষ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকে সবসময় “হ্যাঁ” বলতেই হবে। আপনার মনের শান্তি, মানসিক সীমারেখা এবং নিজের প্রতি সম্মান—এইগুলোও ঠিক ততটাই মূল্যবান।