পুরুষদের জন্য ঘরের টুকটাক কাজ শিখে রাখা কোনো বিলাসিতা নয়—এটা প্রয়োজন। রান্না-বান্না, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়া কিংবা আয়রন করা—এই ধরনের কাজ আসলে জীবনেরই অংশ। নারী-পুরুষের মধ্যে সহমর্মিতা গড়ে তুলতে, সংসারকে সহজ ও স্বস্তির করার জন্য এসব কাজ শিখে রাখা জরুরি।
অনেকেই ভাবে, রান্না করা শুধু নারীদের কাজ। রান্না এসেছে কেবল নারীদের জন্যই। এই ভাবনাটা খুবই চিপ। বাস্তবতা তা নয়। রান্না একটা দক্ষতা, আর দক্ষতা কখনোই লিঙ্গভিত্তিক হয় না। বরং একজন মানুষ হিসেবে রান্না শিখে রাখা নিজের জন্যই লাভজনক।
রান্না করতে গেলে প্রথমদিকে একটু কষ্ট হবে। চুলার পাড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে। কিছু ভুলও হবে—নুন বেশি হবে, ভাজি পুড়ে যাবে, তরকারি কাঁচা থাকবে। কিন্তু কিছুদিন গেলে এমনি ঠিক হয়ে যাবে। তখন নিজেই খাবার রান্না করে খেতে পারবেন। যখন নিজেই রান্না করে খাবেন, তখন এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভূত হবে। মনে হবে—"আমি তো রান্না পারি!"
রান্না শুধু জরুরি সময়ে কাজে লাগে না, এটি একধরনের সৌখিনতাও। ছুটির দিনে নিজের পছন্দের কোনো রেসিপি বানানো, পরিবারের জন্য কিছু তৈরি করে খাওয়ানো—এই অভ্যাসগুলো একঘেয়ে জীবন থেকে ছুটি দেয়। অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো—সংসার জীবন। ধরুন, আপনার স্ত্রী অসুস্থ, পাশে মা-বোনও নেই। এমতাবস্থায় রান্নার বেসিকটা জানা না থাকলে, বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। অথচ, সেই সময় আপনি যদি নিজে রান্না করে তাকে একটু গরম ভাত আর কেবল ডাল দিতে পারেন—তার মুখে যে হাসি ফুটবে, সেটা দামি উপহারের সাথেও তুলনা হবে না।
মেয়েরা সবসময় দামি উপহারে খুশি হয় না। ছোট্ট একটা সহযোগিতা, একটুখানি যত্ন, একটুখানি নজর তাদের অন্তর ছুঁয়ে যায়। আপনি রান্নাঘরে কিছু সময় কাটিয়ে তার জন্য চা বানালেন—এটাও তার কাছে ভালোবাসার নিদর্শন।
একজন স্বামী যখন স্ত্রীকে সঙ্গ দেয়, তার কষ্ট বুঝে পাশে দাঁড়ায়, তখন সেই সম্পর্কটা অনেক দৃঢ় হয়। ভালোবাসার বন্ধনটা আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
রান্না শেখা লজ্জার কিছু নয়, বরং এটি স্মার্টনেস। আপনি হয়তো বাইরে অফিস করছেন, কাঁধে দায়িত্বের ভার; তবুও রান্নাঘরে গিয়ে পরিবারের জন্য কিছু রান্না করলেন—এটাই হলো এক আধুনিক পুরুষের পরিচয়।
আপনি বলতেই পারেন—"আমি তো খুব ব্যস্ত মানুষ, শেখার সময় পাই না।" সত্যি বলতে, একটু সময় বের করলেই হয়। সপ্তাহে একদিন অন্তত রান্না করতে পারেন। ইউটিউবে অসংখ্য রেসিপি আছে, ধাপে ধাপে শেখানো। একবার শুরু করলেই দেখবেন—মন্দ লাগছে না।
একজন মানুষ যখন রান্না শেখে, সে কেবল একটি দক্ষতাই শেখে না; শেখে একধরনের সহানুভূতি, একধরনের সহমর্মিতাও।
শেষ কথা, রান্না শেখাটা পুরুষদের জন্য আজ আর বিলাসিতা নয়, এটি প্রয়োজন। এটি সৌন্দর্য, স্নেহ, আর দায়িত্ববোধের প্রকাশ। রান্না শিখুন, রান্না করুন। নিজে ভালো থাকুন, অন্যকেও ভালো রাখুন।